লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া ও শশার চাষাবাদ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

লাউ-এর চাষ

লাউয়ের জাত- সাধারণত হাজারী লাউ, ক্ষেত লাউ ও দেশি লাউ চাষ করা হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে চাষের জন্য ভারতীয় দুটি জাত সামার পলিফিক লং ও রাউন্ড জাতের চাষ হচ্ছে। এছাড়া উন্নত জাত যথা পুষা মেঘদূত, পুষামঞ্জুরী, দেশি গোল, দেশী লম্বা, বর্তুলাকার, বারি লাউ, বিকন লম্বা লাউ চাষ হচ্ছে।

বীজের হার- প্রতি হেক্টরে ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ 

পর্যাপ্ত সূর্যালোক পড়ে এমন জমি নির্বাচন করা উচিত। জমিতে ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে তৈরি করে নিতে হয়। তারপর ৫-৬ মিটার দূরে দূরে সারি ও মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয় । মাদায় রোপণ করলে বেড তৈরি করে প্রতি বেড়ে এক সারি করে মাদা তৈরি করা যায়। চারা গজালে প্রতি মাদায় ২টি সবল ও সতেজ চারা রেখে বাকীগুলো তুলে ফেলতে হয়। জমিতে সরাসরি বীজ বপন না করে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করা যায়। লাউয়ের জমিতে মাদা হতে মাদার মধ্যে ৪০ সেমি. চওড়া ও ২০ সেমি. গভীর নালা করা ভালো। সার প্রয়োগ-ভালো ফলন পেতে হলে সার প্রয়োগ করা দরকার। হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো।

বর্ণিত সারের মধ্যে টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক এবং গোবর সারের ১-৩ অংশ জমি তৈরির সময় বেড়ে দিতে হবে। বাকী ২-৩ অংশ মাদাতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

উপরি প্রয়োগ হিসেবে-ইউরিয়া সার মাদায় চারার গোড়ার চারিদিকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে এবং পাতা ঘন সবুজ হলে ২য় কিস্তি উপরি প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না ।

১ম উপরি প্রয়োগ-চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর। 

২য় উপরি প্রয়োগ- চারা রোপণের ৪০-৪৫ দিন পর ।

বপন বা রোপণের পূর্বে বীজ প্রস্তুতকরণ- লাউয়ের বীজ গজাতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে। তবে বীজ বুনার আগে ১০-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে আরও তাড়াতাড়ি গজায়। অনেক সময় বীজ জাগ দিয়ে গজায়ে নেয়া যেতে পারে। তবে বীজ ভেজানো বা রোপণের পূর্বে বীজের মুখ দাঁত দিয়ে বা নখের নিচে চাপ দিয়ে ফাটায়ে নেয়া যেতে পারে।

লাউয়ের বীজ রোপণ মাদায় সার দেয়ার ৭-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ৩/৪টি বীজ বপন করতে হয়। চারা রোপণের জন্য আইলও ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আইনের মালায় ১টি করে চারা রোপন করতে হয়। বীজ ২.০ ২.৫ সেমি. গভীরে রোপণ করা ভাল। বীজ রোপণের পর মাদার মালচিং করা হলে সহজে বীজ গজার। কোনস্থানে বীজ না গজালে বা মরে গেলে তাড়াতাড়ি শূণ্যস্থান পূরণ করে দিতে হয়। মাদায় ৩/৪টি চারা গজালে সতেজ ১টি রেখে অন্যগুলো উঠায়ে পাতলা করে দিতে হয়।

অন্তবর্তী পরিচর্যা- লাউ গাছের জন্য মাচা অপরিহার্য। কেননা এর ডগা যুক্তভাবে চলতে না পারলে ফলন ব্যাহত হয়। লাউ যখন বেশি করে চাষ করা হয় তখন মাচা দেয়া খুব কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এজন্য সহজ পদ্ধতি হলো জমিতে খড় বিছিয়ে দেওয়া। প্রথমে গাছের পোড়ার দিকে এবং আস্তে আসেত গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে সারা জমিতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। লাউ গাছ মাচার দিতে হলে চারা ১৫-২৫ সেমি, লম্বা হলেই মাচা করে দিতে হবে। এছাড়া ঘরের চালে বা গাছে উঠায়ে দেয়া যেতে পারে। এতে মাচার খরচ কমে যায়।

লাউগাছ প্রচুর পানি শোষণ করে। বেশি পরিমাণ পানির জন্য পাবন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া সুবিধাজনক। কারণ সারা জমিতে লাউয়ের শেকড় তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়।

লাউ গাছের শেকড় সারা জমিতে মাটির উপরের স্তরের সামান্য নিচ দিয়ে ছড়ায়ে থাকে। প্রাবন পদ্ধতিতে সেচ দিলে সময় জমি হতে রস গ্রহণ করতে পারে। বাড়ির আশেপাশে ১-২টি গাছ লাগানো হলে মাদার চারিদিকে ২ মিটার জুড়ে পানি দেয়া যেতে পারে।

পরাগায়ন- মৌমাছির অভাবে পরাগায়ন ঠিকমত হয় না। বিকেলের দিকে একটি সদ্য কোটা পুরুষ ফুল তুলে এর পুংকেশর ঠিক রেখে ফুলের পাপড়িগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। তারপর প্রতিটি স্ত্রী ফুলের গর্তযুদ্ধে ঐ পুংকেশর খুব আছে আছে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিলে পরাগায়ন হয়ে যাবে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা সম্ভব।

পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন

জাব পোকা- এ পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস চুষে খেয়ে গাছকে দূর্বল করে ফেলে। গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এ পোকা দমনে ১১২৫ মিলি, ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি বা সাইপারমেথ্রিন ৬০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ফসলে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

লাউয়ের মাছি পাকা- স্ত্রী পোকাগুলো লাউয়ের খাসোর নিচে ডিম পাড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই ডিম হতে কীড়া বেরিয়ে আসে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। প্রায় ক্ষেত্রে আক্রান্ত লাউ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিকার-হেক্টর প্রতি বালাইনাশক প্রয়োগের পরিমাণ নিচে দেয়া হলো-

বালাইনাশকের নামবালাইনাশকের মাত্রা (মিলি)পানির মাত্রা (লিটার)
এ্যাগ্রোথিয়ন ৫০ ইসি১১২০ 
প্রোফেনোফোস১১২০ 
ফলিথিয়ন ৫০ ইসি১০০০ 
ডিপটেরেক্স ৫০ এসপি৫৬.০ গ্রাম 

গাছে যাতে পরাগায়নের কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য কীটনাশক বিকেলের দিকে স্প্রে করা ভাল। ফলের মাছি পোকা দমন করার জন্য পোকা ধরার ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে ।

পাউডারী মিলভিউ- এ রোগের লক্ষণ মিষ্টি কুমড়া রোগের অনুরূপ। প্রতিকারের জন্য ২.২৫ কেজি ম্যাকুপ্ৰাক্স ৫% প্রতি এক হেক্টর জমিতে সেপ্র করা যায়।

সেচ ও নিকাশ- পানি সেচ লাউয়ের জন্য খুব প্রয়াজন। লাউ ফসলে পানি চাহিদা বেশি। এতে পাবন সেচ দেওয়া ফলপ্রসূ। চারা অবস্থায় মাদায় বা চারার গোড়ায় পানি জমে থাকলে চারা দুর্বল ও লিকলিকে হয় এবং চারা মারা যায়। বড় গাছের গোড়ায়ও পানি জমে থাকলে গাছ মারা যায়। তাই মাদা জমি তল হতে ৭-৮ সেমি. উঁচু করে করা উচিত। অথবা বেড় করে করা হলে দুই বেডের মাঝখান দিয়ে সেচ ও নিকাশের নালার ব্যবস্থা করা যায় ।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- চারা গজানোর ৬০-৭০ দিন পর গাছে ফুল আসা শুরু হয়। ফুল আসার ১২-১৫ দিনের মধ্যেই লাউ তুলে খাওয়া যায়। লাউয়ের খাসোয় যে পর্যন্ত সহজেই চিমটি কাটা যায়, ততদিন পর্যন্ত লাউ সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া লাউয়ের গায়ে সুক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোম থাকলে এবং ফলের পিছনে ফুল থাকলে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। লাউ কচি থাকা অবস্থায় গা কোমল ও চকচকে দেখায়। এর পরবর্তী সময় থেকে লাউ পাকা অবস্থা পর্যন্ত সাধারণত আর সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায় নাএবং ত্বক রক্ষা হতে থাকে। পরিবারের চাহিদা মোতাবেক গাছে থাকা অবস্থায় লাউয়ের অংশবিশেষ কেটে সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে লাউয়ের কোন অংশবিশেষ কাটার পর ক্ষতস্থান যাতে শুকিয়ে যেতে পারে সেজন্য অন্তত ২ ঘন্টা রোদ পাওয়ার সুযোগ দিতে হয়। অথবা কাটাস্থানে যাতে পোকামাকড় আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য বড় পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। লাউ কাটার পর ছায়া ও ঠান্ডায় ২/৩ দিন পর্যন্ত হালকা পানি ছিটা দিয়ে রাখা যায়। কার্টুন প্যাকেটে খাড়াভাবে সাজায়ে বাজারজাত করা শ্রেয়। তাতে লাউয়ের গুণাগুণ ও ভৌত অবস্থা ভাল থাকে ।

ফলন- প্রতি মাদায় ১৫০-২০০ কেজি অথবা প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ টন লাউ পাওয়া যায়।

মিষ্টি কুমড়ার চাষ

মিষ্টি কুমড়ার জাত

বাংলাদেশে ছোট বা বড়, গোল বা লম্বাটে আকারের এবং ধূসর, কালো বা লালচে বর্ণের মিষ্টি কুমড়া বারো মাসই জন্মে। বর্তমানে বিদেশী জাত যথা-ইয়োলো ফ্রেশ, ব্লেড ফ্লেপ, টেবিল, কুইন, গ্রীন হার্বার্ড, বাটার বল ইত্যাদি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশী কোন সুনির্দিষ্ট জাত নেই। তবে উৎপাদনের সময় অনুসারে মিষ্টি কুমড়াকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- বৈশাখী (গ্রীষ্ম মৌসুম), হেমত ও যাধী (শীত মৌসুম।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

কুমড়া চাষের জন্য পানি জমে না বা সহজে নিষ্কাশনযাগ্যে এমন স্থান নির্বাচন করা উচিত। অল্প পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বাসগৃহের আশে পাশে ছায়াহীন স্থানে মাদা করে বীজ বানো যেতে পারে। তবে ব্যবসাভিত্তিক মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে হলে সম্পূর্ণ জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে তৈরি করে নিতে হবে। প্রচুর আলোবাতাস । যুক্ত এমন জমি কুমড়া জন্মানোর জন্য উত্তম।

সার প্ররোগ- মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে নিম্নলিখিত পরিমাণে সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

গোবর বা আবর্জনা পচা সার ১০-১৫ টন

টি.এস.পি ১২ কেজি

এমওপি ১০০ কেজি

গোবর ও টি.এস.পি সারের অর্ধেক পরিমাণ জমি চাষ করার সময় ভালভাবে সম্পূর্ণ জমির মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী অর্ধেক সার বীজ বানোর জন্য তৈরি মাদার প্ররোগ করতে হবে। ইউরিরা এবং এমওপি সার চারা গজানোর পর সমপরিমাণে দু'কিটিতে মাদার চারিদিকে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা ২৫-৩০ সেমি. লম্বা হওয়ার পর মাদার চারদিকে অগভীর নালা কেটে প্রথম কিস্তির সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী দ্বিতীয় কিভিন্ন সার ফুল আসার সময় একইভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা - মিষ্টি কুমড়া চাষে হেক্টর প্রতি ১২০০ থেকে ১৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। ঝাপোলা েজাতের জন্য ২-২.৫ মিটার দূরত্বে এবং লতানো জাতের জন্য ৩ থেকে ৪ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি মাদার ৩-৪টি করে বীজ বুনতে হবে। এছাড়া রবি ও খরিফ মৌসুমের ভিত্তিতে কুমড়া চাষে দুরত্বের তারতম্য হয়। মাদার দূরত্ব এমন হতে হবে যাতে গাছ পুর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে মাদা বা সারির মধ্যকার স্থান ঢেকে যায়। কুমড়ার বীজ ডিবলিং পদ্ধতিতে লাগানো যায়।

তিব্লিং পদ্ধতি হলো হাতের সাহয্যে বীজ মাটিতে চেপে বসিয়ে দেওয়া।  বীজ বপনের কাজ তিনভাবে করা যেতে পারে। 

যেমন- (ক) বীজতলায় চারা তৈরি করে, (খ) মাদায় বীজ বপন করে 

(গ) পপলিব্যাগে চারা তৈরি করে।  

বীজ বপনের সময় সরু দিকটা ওপরের দিকে রাখতে হয়। । 

ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি ও ফলন বেশি পাওয়ার জন্য বাউনি তৈরি করে বাউনির উপর কাজ তুলে দেয়া দরকার হয়। বর্ষাকালীন ফসলের জন্য এ ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক।

শুষ্ক মৌসুমে জমিতে ফসল হিসেবে লতানো জাতের কুমড়া চাষ করলে ফল ধরার সময় ফলের নিচে খড়কুটো বিছিয়ে দিতে হয়। কৃত্রিম পরাগায়নের দ্বারা মিষ্টি কুমড়ার ফলন বাড়ানো যায়। এজন্য ভারেবেলা পুরুষ ফুলের পরাগধানী হাতে নিয়ে স্ত্রী ফুলের গর্তমুক্তে-আস্তে করে ঘষে দিতে হয়।

পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন

বপোকা-কুমড়া গাছের কটি পাতা ও ডগার রস চুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এ পোকা দমন করার জন্য ১০ লিটার পানিতে (এক প্রেয়ার) ১২ মিলি. ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি বা সাইপারমেথ্রিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা যায়।

ফলের মাছি পোকা- এ পোকা কুমড়ার অন্যতম ক্ষতিকারক পোকা। এ পোকা কুমড়া ফলের উপরের খোসার নিচে ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে কুমড়ার ভিতরে ঢুকে কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। প্রায়ক্ষেত্রে আক্রান্ত ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। দমন পদ্ধতি জাব পোকার দমন পদ্ধতির অনুরুপ। এছাড়াও ফাঁদের সাহায্যে মাছি পোকা দমন করা যায়। পোকা ধরার ফাঁদ তৈরি করার জন্য প্রথমে কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে পিষে নিতে হয়। এরপর ৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ ডব্লিউপি ঔষধ ১০০ গ্রাম পিষানো কুমড়ার সাথে মিশিয়ে বিষ টোপ তৈরি করতে হবে। উক্ত বিষ টোপ মাটির পাত্রে নিয়ে মাচার কিছুটা উঁচুতে জমির বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করতে হবে। ফলের মাছি বিষ টোপে আকৃষ্ট হবে এবং পরবর্তীতে মারা যাবে। বিষ টোপ প্রতি ৩-৪ দিন অন্তর অন্তর বদলাতে হবে।

কুমড়ার লাল বিটল

কুমড়ার খুবই ক্ষতিকর পোকা। বয়স্ক পোকা পাতা ও ফল খেয়ে ফেলে। পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতা খেয়ে গোলাকার ছিদ্র করে। এ পোকা দমন করার সহজ উপায় হলো প্রতিদিন সকালে হাতে ধরে মেরে ফেলা।

ইপিল্যাকনা বিটল-ইপিল্যাকনা বিটলের পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে শুধু পাতার শিরা বাদ রাখে। পাতা জালির ন্যায় দেখার আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এ পোকা দমনের জন্য ১০ মিলি ডায়াজিন ৬০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রেড স্পাইডার (মাইট)- মাইট এক ধরনের খুবই ছোট মাকড়সা। এ মাকড়সা পাতার নিচে থাকে এবং পাতার সবুজ অংশ হতে রস চুষে খেয়ে ফেলে। পরে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং হলুদ হয়ে মারা যায়। এ মাকড় দমনের জন্য থিয়ািেভট ৮০ ডবিউ জি ৩৫ কেজি ১০০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে।

পাউডার মিলডিউ - এ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার এর ন্যায় দেখা যায়। এই দাগ সাদা গুড়ায়ে আবৃত। কোন কোন ক্ষেত্রে সমত পাতা গুড়ায়ে ঢেকে যায়। বয়ষক পাতায় দাগ বাদামী রং এর হয়। অধিক আক্রান্ত পাতা মারা যায়। দমনের জন্য ২ গ্রাম থিওভিট প্রতি ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ডাউনি মিলডিউ- এ রোগের আক্রমণে পাতার নিচে গোলাপী এবং পাতার উপরে ছোট ছোট হলুদাভ দাগ পড়ে ৷ পাতায় ধূসর রং এর পাউডার দেখা যায়। দমন পদ্ধতি পাউডারি মিলডিউ রোগের মতই।

অন্তবর্তী পরিচর্যা- শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করলে অধিকাংশ স্থানে সেচের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বর্ষাকালে চাষ করা হলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে আগাছা বাছাই, সেচ বা বৃষ্টি পর মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

সেচ ও নিকাশ- শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হলে অধিকাংশ স্থানে সেচের প্রয়োজন হয়। জমিতে লতানো হিসেবে চাষ করা হলে জমিতে পাবন সেচ দেওয়ার পর এবং ফল ধরা শুরু হলে ফলের নিচে খড়কুটা বিচিয়ে দিতে হয়। তবে খড়কুটা সেচের পানিতে ভিজে থাকলে গাছ ও ফলের ক্ষতি করতে পারে। জমিতে লতানাভোবে চাষ করলেও বেড় করে রাখলে সেচের পানি দেয়া ও নিকাশ করার সুবিধা হয়। মাচা বা বাউনিতে দিয়ে চাষ করলে মাদায় গাছের গোড়ায় ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া দরকার হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

মিষ্টি কুমড়া কাঁচা পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর থেকে গাছে ফল ধরা আরম্ভ করে। চাহিদা মাফিক কচি ফুলও সংগ্রহ করা চলে। ফল পরিপুষ্ট হওয়ার সাথে সাথে সংগ্রহ করলে গ সংখ্যক ফল ধরে। তবে ঘরে সংরক্ষণের উদ্দেশে সংগ্রহ করতে হলে কুমড়াকে অবশ্যই ভালভাবে পাকিয়ে নেয়া উচিত। পাকার সাথে সাথে ফল হলুদ বা কমলা রঙ ধারণ করে ও বোটা শুকিয়ে আসে। মিষ্টি কুমড়া পাকায়ে উঠানো হলে ৩/৪ মাস পর্যন্ত ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যায়। পাকা মিষ্টি কুমড়া খাঁচায় করে দূরের বাজারেও পাঠানো যায় ।

ফলন হেক্টর প্রতি মিষ্টি কুমড়া ১৫-২০ টনের মত পাওয়া যায়।

চাল কুমড়ার চাষ

চাল কুমড়ার জাত 

বাংলাদেশে চাল কুমড়ার বিভিন্ন জাত রয়েছে, কিন্তু জাতসমূহের বৈশিষ্ট্য সুনির্দিষ্ট নয়। এ উদ্ভিদের লতানোর মাত্রা, ফলের আকৃতি ও আকার ইত্যাদির ব্যাপারে জাতসমূহের মধ্যে কিছু ভিন্নতা লক্ষ করা যায় ।

বাংলাদেশে কুমড়ার অনুমোদিত জাতগুলো প্রাথমিকভাবে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক) লম্বাটে জাত, (খ) গোলাকার ডিম্বাকার জাত ও (গ) মাঝারি লম্বাটে জাত ৷

(ক) লম্বাটে জাতঃ ইপসা চালকুমড়া-১, পুবালী এফ-১, 

(খ) ডিম্বাকার জাতঃ জালী কুইন, হীরা-৪৫১ এফ-১। 

(গ) মাঝারি লম্বাটে জাতঃ বাসন্তী এফ-১ দূরত, দুর্বার, জুপিটার এফ-১

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

পারিবারিক বাগানে চাল কুমড়ার চাষ করতে হলে মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোনো বৃক্ষের উপর তুলে দেয়া যায় ।

বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে প্রথমে ভালোভাবে জমি তৈরি করে মাদায় অথবা সারিতে বীজ বুনতে হয়। মাদা হতে মাদা ৪-৫ মিটার করতে হয়। প্রতি মাদায় ২-৩টি গাছ রাখতে হয়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ ও মাদা প্রতি নিম্নবর্ণিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন ।

চারা রোপণ ও অন্তর্বর্তী পরিচর্যা

বীজ বপনঃ মাদায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ মৌল সার দিয়ে ভালোভাবে মাদা তৈরি করার পর প্রতি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ বপন করতে হয়। ফেব্রুয়ারি-মে মাসে বীজ রোপণ করা যায় ।

বীজ বপনের গভীরতা- ১.৫-২ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ রোপণ করতে হয়।

অঙ্কুরাদেগমের সময়কাল- বীজ গজাতে ৫-৭ দিন সময় লাগে। সারের উপরি প্রয়োগ ও সময়মতো সারের উপরি প্রয়োগ করতে হয় ।

সেচ: ফসলের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে আইলের মাটির অবস্থা বুঝে মাদা বা উঁচু জায়গায় যেখানের মাটি শুকিয়ে গেছে সেখানে সেচ প্রদান করতে হয় ৷

গাছ পাতলাকরণঃ চারা ১০-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে প্রত্যেক মাদা বা উঁচু জায়গায় ১টি করে সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়।

শুন্যস্থান পূরণঃ কোনো কারণে চারা মারা গেলে সেখানে নতুন করে সেই একই বয়সের চারা রোপণ অথবা বীজ বপন করতে হয় ।

বাউনি বা মাচা দেয়াঃ গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে বাউনি এবং ছোট করে মাচা দিতে হয় । 

কুমড়ার যৌন অভিব্যক্তি ও যৌনরুপ : ফুল ধরার ব্যাপারে কুমড়া গােেত্রর উদ্ভিদ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ।

এরা ভিন্ন প্রকার ফুল উৎপাদন করে, যথা-ত্রী ফুল ও দ্বি-লিঙ্গিক ফুল। একই গাছে সুনির্দিষ্ট প্রকারের ফুল থাকার কারণে বিভিন্ন যৌনরূপের সৃষ্টি হয়। যৌনরূপ অনুযায়ী কুমড়া গােেত্রর উদ্ভিদসমূহকে নিম্নবর্ণিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

উভয় লিঙ্গঃ গাছের সব ফুল দ্বি-লিঙ্গিক। এ জাতীয় যৌনরূপ বিরল, তবে কেবল, লাফা, কুকুবিস ও বেনিনকাসা গণের কয়েকটি জাতে দেখা যায়।

এক লিঙ্গঃ একই উদ্ভিদের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা আলাদা উৎপন্ন হয়। এটাই প্রধান যৌনরূপ এবং সর্বাধিক সংখ্যক প্রজাতিতে বিদ্যমান।

পুরুষ দ্বি-লিঙ্গিকঃ একই গাছে পুরুষ ও দ্বি-লিঙ্গিক ফুল থাকে। স্ত্রী দ্বি-লিঙ্গিক ঃ একই গাছে স্ত্রী ও দ্বি-লিঙ্গিক ফুল থাকে। 

সকল লিঙ্গিকঃ একই গাছে পুরুষ-ত্রী আলাদা আলাদা এবং দ্বি-লিঙ্গিক ফুল পাওয়া যায়। 

ভিন্নবাসীঃ প্রতিটি গাছ জীবনকালে যতগুলো ফুল উৎপাদন করে তা বেশিরভাগই পুরুষ জাতের ফুল। পুরুষ ও সত্রী। ফুলের অনুপাতকে যৌন অনুপাত বলা হয়। জাত ও পরিবেশ অনুযায়ী পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত ৪:১ থেকে শুরু করে ৬০৪১ পর্যন্ত হতে পারে। 

যৌন অভিব্যক্তির পরিবহণঃ স্বাভাবিক অবস্থায় কুমড়া গােেত্রর উদ্ভিদের যৌন অভিব্যক্তি তথা, ফুল ধরার আগামত্ব, ফুলের প্রকার ও সংখ্যা যৌন অনুপাত ইত্যাদি পরিবেশের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে ফুল ধরার বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন হরমােেনর পরিমাণ পরিমাপ করে এবং উদ্ভিদের অঙ্গে প্রয়োগ করে ফুল উৎপাদনে সফলতা আনা যায়। 

পরাগায়ন ও ফল ধারণঃ ভিন্নবাসী জাতসমূহে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে থাকার কারণে ফল ধারণের জন্য পর-পরাগায়ন অপরিহার্য। মৌমাছি জাতীয় পোকা পরাগায়ন ঘটিয়ে থাকে। মৌমাছির অভাবে পরাগায়ন হয় না তাই প্রচুর স্ত্রী-ফুল থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ ফল উৎপাদিত হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকরভাবে পরাগায়ন না হওয়া এজন্য দায়ী । এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ধারণ বৃদ্ধি করা যায়। পরাগায়ন অসম্পূর্ণ হলে ফলের আকৃতি অনিয়মিত হতে পারে ।

পোকা দমন

ফলের মাছি পোকাঃ এ পোকার কীড়া ফল ছিদ্র করে ঢুকে ফলের ভিতরের অংশ খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। বিষটোপ ব্যবহার করে ফাঁদের সাহায্যে এ পাপোকা দমণ করা যায়। 

লাল কুমড়া বিটলঃ চারা গাছের জন্য এ পোকা ক্ষতিকর। পাতা খেয়ে সম্পূর্ণ পাতা ছিদ্র করে ফেলে। 

ইপিল্যাকনা বিটলঃ পূর্ণবয়স্ক পোকা ও গ্রাব পাতার সবুজ অংশ খেয়ে শুধু পাতার শিরা বাদ রেখে দেয় । আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে মরে যায় এবং জালির মতো হয়ে যায়।৫ফেনথিয়ন বা ম্যালাথিয়ন ১ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 লাল মাকড়ঃ এক ধরনের খুব ছোট মাকড় পাতার নিচে থাকে এবং পাতার সবুজ অংশ রস চুষে খেয়ে ফেলে। যার ফলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং পরে পাতাটি হলুদ হয়ে মরে যায়। কুইনালফস ৩ মিলি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। 

রোগ দমন- পাউডারি মিলডিউ ও পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার এর ন্যায় দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে দেয়।

ডাউনি মিলডিউঃ পাতার নিচে ধূসর বেগুনি রং ধারণ করে। আক্রান্ত পাতা ও গাছ দূর্বল হয়ে মারা যায়। হেক্সাকোনাজোল ১-২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

সেচ ও নিকাশঃ চারা রোপণকালে মাদায় মাটির জো বুঝে ৮-১০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। পাবন সেচ দিলে কুমড়ার চারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর চারার বা বড় গাছের গোড়ায় পানি জমলে তাড়াতাড়ি গাছ মারা যায়। এমনকি বেশি বৃষ্টিপাতের কারণেও ফলন কমে যায়। তাই কুমড়ার মাদায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য নিকাশ ব্যবস্থা আগেই করে রাখতে হয়।

ফসল সপ্তাহঃ বীজ বপনের ২-৩ মাস পর থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। 

ফলন : প্রতি আইলে ৪০-৫০ কেজি। 

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণঃ বীজ বানোর দু'মাসের মধ্যে চাল কুমড়ার গাছে ফল আসা শুরু করে এবং ৬০-৭৫ দিন পর্যমত ফল দিতে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সকজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হতে না হতেই ফল সংগ্রহ করা দরকার। কিছু সংখ্যক ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে উৎপাদিত ফল গাছে রেখে দিতে হয়। কচি ফল সংগ্রহ করা হলে চাল কুমড়ার প্রতি হেক্টর এ ফলন ১৫ টন পর্যন্ত হওয়া সম্ভব।

শশার চাষ

শশা একটি অতি প্রাচীন সবজি। বর্তমানকালে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানে শশার চাষ হচ্ছে। কচি শশা সালাদরূপে ও সরাসরি খাওয়া যায়। ভালো পরিপক্ক রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশ্চাত্যে খুব কচি শশার আচার তৈরি করে। গাছে ভালোভাবে পাকানো শশা কিছুদিন সংরক্ষণ করা চলে।

শশার জাত

ছোট, বড়, দীর্ঘ, বেঁটে, গাঢ় সবুজ ও হালকা সবুজ, প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের শশা আছে। উৎপাদনের সময় অনুসারে শশা দু'টি প্রধান জাতে বিভক্ত। যথা-খুঁয়ে শশা ও বর্ষাতি শশা। ছুয়ে শশা ফেব্রুয়ারি-মার্চ মসে বপন করে এপ্রিল-জুন মাসে সংগৃহীত হয় এবং ভূমির উপরেই গাছ থাকে। গাছ ও ফল ক্ষুদ্রাকার। বর্ষাতি শশা এপ্রিল-জুন মাসে বপন করে জুন হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ শশা মাচায় তুলে দেওয়া হয়। খিরা এক প্রকারের শশা। আকারে ছোট এবং কাঁচা অবস্থায় সরাসরি কিংবা সালাদরূপে খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ শশা খুঁয়ে শশার মতো ভূমির উপর লতায়ে থাকে। এ শশা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস বপন করা হয়।

শশার কয়েকটি জাতঃ মার্কেটার, নায়াগ্রা, কলোরেডো, বাপী হাইব্রিড, পামটো, ন্যাশনাল পিকলিং, সিকাগো পিকলিং, মডেল ও ইয়ার্ক টেস্ট পিকলিং ইত্যাদি। এছাড়াও অন্যান্য জাতগুলো হচ্ছে বিউটিফুল এফ-১, এভার- গ্রীন এফ-১, নীবজা এফ-১, জয়েন্ট লং, শাহী-৫৫০, ওরিয়েন্ট ইতাদি।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ হেক্টর প্রতি ৪-৫ টন গোবর, ১৭০-১৮৫ কেজি ইউরিয়া এবং ১২০-১৫০ কেজ টিএসপি ও ১০০-১৫০ কেজি এমওপি সার ব্যবহার করা চলে।

মাঝারি উর্বর হতে উর্বর জমি শশা চাষের জন্য উত্তম। জমিতে ৪/৫ বার চাষ ও মই দিয়ে ভারপর বেড/মাদা তৈরি করতে হয়। মাদায় গর্তে বীজ রোপণের ৮/১০ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে সার মিশাতে হবে। শুধু ইউরিয়া সার চারা পদ্মানোর ২০ দিন ও ৪০ দিন পর দুইভাগে মাদার উপরে ছিটিয়ে দিয়ে মাটি আগলা করে মিনারে দিতে হবে। মৌল সার হিসেবে খৈল হেক্টর প্রতি ২৮০ কেজি দেওয়া যায়।

চারা রোপণ ও অতবর্তী পরিচর্যা- ছুঁয়ে শশার জন্য ১.৫-১.৮ মিটার দূরত্বে সারি ও সম দূরত্বে ঐ সারিতে বীজ রোপণ করা যায় । পালা বা বর্ষাতি পশার জন্য ১.১-২.৪ মিটার দূরত্বে সারি ও সম দূরত্বে ঐ সারিতে বীজ রোপণ করা যায়। হেক্টর প্রতি ৬০০-৭০০ গ্রাম বীজ লাগে। তবে ২-২.৫ দুরত্বে মানা করা হয় এবং এর গভীরতা ৫০-৮০ সেমি. হলে ভালো হয়। এক একটি মাদায় প্রথমে ৬/৭টি করে বীজ পুঁতে চারা গজানোর পর সুস্থ ও সবল দেশে ২টি করে চারা রেখেঅন্যগুলো তুলে ফেলতে হয়। বর্ষাতি শশার জন্য মাচা বা ইংরেজি 'এ' আকৃতির বা তার আকৃতির ন্যায় করে কাঠি দিয়ে বাউনি তৈরি করা যায়। মাঝে মাঝে মাটি খুঁচিয়ে আপলা করে রাখতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হয়। বৃষ্টির পানিতে বা সেচের কারণে মাটিতে চটা হলে তা নিড়ানি দিয়ে ভেংগে দিতে হয়।

পোকা দমন- লাল পোকা, কাঁটালে পোকা, মাছি পোকা ও মাজরা পোকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মাজরা পোকার কীড়া কাণ্ড ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে। এসব পোকা দমনের জন্য ডাইব্রোম কিংবা ডিপটেরেক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ফেনিট্রোথিয়ন, ফেনভেলারেট ১.১২-১.২৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রোগ দমন- ডাউনি মিলডিউ, পাউডারি মিলিডিউ, এনথ্রাকনাজে বা ফল পচা রোগ এবং মোজাইক প্রভৃতি প্রধান রোগ। এদের দমনের জন্য আগাছা ও আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করা ভাইরাস বহণকারী পাকা বিনষ্ট করা এবং প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা দরকার। যেমন- নায়াগ্রা, বাপী হাইব্রিড, ইয়র্ক স্টেট পিকলিং, ওহাইও এম আর ১৭ প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধী জাত। বালাইনাশক হিসেবে ম্যানকোজেব, কপারঘটিত, ইপ্রোডিয়োন যথাক্রমে ২-৩.৫ গ্রাম/লিটার, ১-২ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে।

পানি সেচ ও নিকাশ - বসন্ত ও শীতকালীন শশা, যথা-খুঁয়ে শশা ও খিরা ইত্যাদিতে প্রচুর পানি সেচের প্রয়োজন । অতিরিক্ত পানি ভীষণ ক্ষতি করে তাই পানি নিকাশের জন্য নালা রাখতে হয়। আগাছা বাছাই ও পরিচর্যা কাজের দিকে লক্ষ রাখতে হয়।

ফসল সগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ - চাকু দ্বারা বেঁটা কেটে শশা সংগ্রহ করতে হয়। সালাদ, আচার ইত্যাদির জন্য ব্যবহার্য শশা বেশ কচি অবস্থায় তোলা উচিত। প্রতিদিনই বা দু একদিন পর পরই সংগ্রহ করা যায়। শশা কার্টুন বা অন্য গাছের সবুজ পাতাসহ খাচায় করে সাজায়ে বাজারে নেওয়া যায়। কুচি অবস্থায় শশা সংগ্রহ করা হলে গাছে অধিক সংখ্যক ফলে। হেক্টর প্রতি শশার ফলন ৭-১৫ টন।

শশার তরকারী করতে হলে সেগুলো কিছু বয়ষ্ক করে তালো যায়। পাকা শশা প্রায় সপ্তাহখানেক সংরক্ষণ করা যায় এবং এগুলো পায়েস ও মোরব্বা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

Content added By

অনুশীলনী

এক কথায় উত্তর 

১. রাউজাতের লাউ কোন দেশের? 

২. লাউ বীজ মাদা সার দেওয়ার কতদিন পর রোপণ করা উচিত? 

৩. লাউয়ের ১টি পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত কয়টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা যায়? 

৪. মিষ্টি : কুমড়া রোপণের মাদায় গর্ত কি আকারের করা ভাল ? 

৫. মিষ্টি কুমড়ার ব্যবহৃত বিষটোপ কতদিন পর পর বদলাতে হয় ? 

৬. বাসনিত এফ-১ চালকুমড়া কোন আকারের জাত ? 

৭. কুমড়া জাতীয় কোন সবজিতে দ্বি-লিঙ্গিক ফুল থাকে ? 

৮. উৎপাদনের সময় অনুসারে শশার জাত কয়টি ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. লাউ চাষে সারের মাত্রা উল্লেখ কর। 

২. লাউয়ের পরাগাণ কিভাবে করা হয় তা বর্ণনা কর। 

৩. মিষ্টি কুমড়ার মাছি পোকা দমন কৌশল বর্ণনা কর। 

৪. চাল কুমড়ার যৌন অভিব্যক্তি ও যৌনরূপ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও । 

৫. শশা চাষে জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ সম্পর্কে লেখ।

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. লাউ চাষে জমি তৈরি সার প্রয়োগ ও বীজ রোপণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর। 

২. মিষ্টি কুমড়া চাষে সারের মাত্রা, চারা রোপণ ও পরবর্তী পরিচর্যাসহ ১টি পোকা ও ১টি রোপণ দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর । 

৩. চালকুমড়ার জাতসহ চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা এবং ফল ধারণে পরাগায়নের ভূমিকা বর্ণনা কর। 

৪. শশার চাষ পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা কর

Content added By
Promotion